ডাল্লে মানে ঝাল। তবে বাংলার এই লঙ্কা শুধু ঝালের জন্যও বিখ্যাত নয়। এর ঝাঁজ যেমন রয়েছে তেমনই এর স্বাদ ও গন্ধেও রয়েছে বিশেষ বৈশিষ্ট্য।

পাহাড়ে বেড়াতে গেলে বাকি সব কিছু দেখা, উপভোগের সঙ্গে সঙ্গে ডাল্লের খোঁজ করেন পর্যটকরাও।

ওড়িশার সঙ্গে লড়াই করে জিআই (জিওগ্রাফিকাল ইন্ডিকেশন) তকমা পায় রসগোল্লা। সে কাহিনি সকলেরই জানা। কিন্তু মিষ্টির মতো ঝালেও যে বাংলার হাতে রয়েছে জিআই স্বীকৃতি তা অনেকেরই অজানা। ভাল নাম— ডাল্লে খুরসানি। তবে দার্জিলিং বা কালিম্পঙের মানুষ ডাল্লে বলেই ডাকেন। ২০২১ সালেই বাংলার এই দুই জেলা ডাল্লে লঙ্কার জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের জিআই তকমা পায়। তবে এর আগে প্রতিবেশী রাজ্য সিকিমও একই ভাবে ডাল্লে উৎপাদনের অন্যতম প্রধান ক্ষেত্র হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছিল।

ডাল্লে মানে ঝাল। তবে বাংলার এই লঙ্কা শুধু ঝালের জন্যও বিখ্যাত নয়। এর ঝাঁজ যেমন রয়েছে তেমনই এর স্বাদ ও গন্ধেও রয়েছে বিশেষ বৈশিষ্ট্য। পাহাড়ি এলাকায় লঙ্কার ঝাল বেশি হয়। জানা যায় নাগাল্যান্ডের এক প্রজাতির লঙ্কা নাকি বিশ্বের সবচেয়ে ঝাল। তবে ডাল্লেও কম যায় না।

পাহাড়ে বেড়াতে গেলে বাকি সব কিছু দেখা, উপভোগের সঙ্গে সঙ্গে ডাল্লের খোঁজ করেন পর্যটকরাও। অনেকেই কিনে নিয়ে আসেন ডাল্লের আচার। পাহাড়বাসী মাছ এবং মাংস রান্নায় খুবই ব্যবহার করেন এই লঙ্কা। কলকাতাতেও এই লঙ্কা যাতে পাওয়া যায়, তার তোড়জোড় শুরু করেছে একটি সংস্থা। এমনিতে দার্জিলিং, কালিম্পঙে ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা কেজি দরে পাওয়া যায় কাঁচা ডাল্লে। কিন্তু কলকাতায় নিয়ে এসে ওই দামে বিক্রি করা সম্ভব নয়। জানালেন ওই উদ্যোগে যুক্ত এক ব্যবসায়ী। তিনি বলেন, ‘‘আসলে কাঁচা ডাল্লে পাহাড় থেকে এখানে আনার খরচ তো রয়েইছে। সেই সঙ্গে আবহাওয়ার কারণে নষ্ট হয়ে যাওয়ার ঝুঁকিও বেশি। ইতিমধ্যেই পরীক্ষামূলক ভাবে কিছু কিছু ক্রেতাকে শুকনো ডাল্লে দেওয়া হয়েছে। তাতে দামটা কম থাকে। তবে ডাল্লের আচার পাহাড়ে যে দামে পাওয়া যায় তার কাছাকাছি দরেই কলকাতাতেও পাওয়া যাবে।’’

ওই ব্যবসায়ী জানিয়েছেন, লঙ্কার ঝাল মাপা হয় স্কোভাইল হিট ইউনিট (এসএইচইউ) দিয়ে। ঝাল পরিমাপক অনুযায়ী, ডাল্লে হল এক লাখ থেকে সাড়ে তিন লাখ এসএইচইউ। শুধু স্বাদের জন্যই নয়, এই লঙ্কায় উপকারি উপাদানও অনেক আছে বলে জানা যায়। ভিটামিন এ, ই ছাড়াও এতে সোডিয়াম ও পটাশিয়াম রয়েছে। ১০০ গ্রাম ডাল্লে খুরসানিতে ২৪০ মিলিগ্রাম ভিটামিন থাকে। যেটা নাকি কমলালেবুর চেয়ে পাঁচ গুণ বেশি। ডাল্লের এত নাম হলেও পাহাড় থেকে তা অন্যত্র পাঠানোর পরিকাঠামো এখনও সে ভাবে গড়ে ওঠেনি। তবে ইদানীং দার্জিলিং, কালিম্পঙে অনেক কৃষকই বাকি কিছুর সঙ্গে ডাল্লে চাষ করছেন।

পাহাড়বাসীরা ডাল্লে শুধু খান না, টোটকা চিকিৎসার জন্যও ব্যবহার করা হয়। কাটা ঘায়ে নাকি ঝাল ডাল্লে দিলে অনেক উপকার পাওয়া যায়। আবার পেটের অসুখেও ব্যাকটেরিয়া মেরে ফেলতে এই লঙ্কার অনেক উপকার পাওয়া যায়। আবার বাড়িতে সব সময় ডাল্লে লঙ্কা রেখে দেওয়া সংসারের জন্য কল্যাণকর বলেও বিশ্বাস করেন অনেক পাহাড়বাসী।

তথ্যসূত্র: আনন্দবাজার পত্রিকা